স্মৃতি রোমন্থন
স্মৃতি রোমন্থন – মাহ্ফুজ রাজন
মনে পড়ে
সূর্যাস্তের এক বিকেল বেলায়
একজোড়া হাত আমায় ছুঁয়ে বলেছিল,
ভুলে যাবেনাতো ?
আমি মৃদু হেসে বলেছিলাম,
ভালো যে বাসেনা সে তো
চোখের তারায় সন্ধেহের ছবি আঁকবেই।
অমনি তুমি
গোমড়া মুখে পেছন ফিরেছিলে।
কারণ, তুমি জানতে
তোমার সেই চুপ করে থাকাটা
বিষন্ন মুখের বরফ শীতলতা
আমার কাছে এক প্রকাণ্ড বিপ্লব,
তীব্র খরস্রোতা নদীর উন্মাতাল তরঙ্গ।
ফ্রেমে বাঁধা স্বপ্নদৃশ্যের মতো তার চুলে
পরক্ষণেই আঙ্গুল ডুবিয়ে বলেছিলাম,
ভুলবোনা, কখনোই না, দেখে নিও !
অমনি তুমি
সমস্ত কাল মেঘ দুহাতে সরিয়ে
আষাড়ের প্রথম বৃষ্টির মতো
বুকে ঝাপিয়ে পড়েছিলে,
কাকাতুয়ার মতো নরম ছিপছিপে
শরীর লতাকে সমর্পন করে
বাচ্চা মেয়ের মতো
থরথরিয়ে কেঁদে মরেছিলে।
অস্ফুটে বলেছিলে, ভালবাসি ভালবাসি।
তোমার সেই ফুঁপিয়ে ওঠা কান্নার সুর
ভুরভুর করে উড়ে যাওয়া
কার্পাস তুলোর মতোই
আদিগন্ত বিস্তর নীলিমায় হারিয়েছিল
তোমারই মতো।
একদিন তোমার শ্বেত পদ্মের পায়জোড়
স্পর্শ করেছিলাম বলে— তুমি সবিস্ময়ে
বিস্ফোরণোন্মূখ চোখ চেয়ে বলেছিলে,
ওমা ! এ কী করছো, পায়ে হাত দিচ্ছ !
আমি অট্টহেসে বলেছিলাম,
নারী সেতো নারীই। তার সমস্ত সত্তাই
শ্যামল বৃক্ষ-বিথীকার নিরাভরণ সৌন্দর্য,
যেখানে অক্লেশে যাওয়া যায়
সমস্ত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে।
ঋতু, মনে কি পড়ে—
গ্রীষ্ম কিংবা শীত সকালের অন্তিমলগ্নে
তোমার উষ্ণ ভেজা
হাত দু’খানি হাতে জড়িয়ে
মটরশুটির নেতিয়ে ওঠা গাছ মাড়িয়ে
পথ চলতে চলতে
শুকতারার মতো তোমার
টলটলে চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম,
ইউর ফেস ইজ দ্য সামারী অফ দিস ওয়ার্ল্ড।
ঋতু মনে কি পড়ে—
সিল্কের নীল রঙা কাপড়ে
তোমার ছিপছিপে শরীরখানা মুড়িয়ে
যখন তুমি এলে
শরৎ সকালের শিউলি হয়ে
স্পর্শ করার প্রবল ইচ্ছেতে
আমার সমস্ত সত্তায় সিরসিরানিকে
উপেক্ষা করে গেছি অকপটে।
দিবা-নিশি অহর্নিশ
কামনার অক্টোপাসের সাথে যুদ্ধ করে
শেষে অবসন্ন মনে
কল্পনারঙিন আরামপ্রিয়তায়
শীতল সরোবরের মতো তোমার
নির্মল নাভিতে
মৃগনাভির গন্ধ পেয়েছি, কিংবা
তোমারই দেয়া গাঁদাটাকে নিয়ে
সারারাত ঘুমে থেকেছি,
আর গন্ধ শুঁকেছি গাঁদাটার মাঝে
তোমার শরীরের।
আজ তুমি রয়ে গেছো
চাওয়া-পাওয়ার থেকে অনেক দূরে।
হয়তো পুরুষ-সিংহের তীব্র থাবার পরিবর্তে
কাপুরুষের (?) অসমর্থতার স্পর্শে
মুগ্ধ হতে পারনি বলে।
কোন লাভ হবেনা জেনেও
আমার মনের এই অসংবদ্ধ প্রলাপগুলো
মনের ডায়রিতে লিখে যাই।
আমার বুক ভরা আর্তিগুলো
আমারই বুকের ভেতর
স্বপ্ন দৃশ্যের মতো ঘুমিয়ে থাক।