সারাকাল বৃষ্টি
সারাকাল বৃষ্টি – সুনীতি দেবনাথ
পরিত্যক্ত বিকেলে একটি ঝাঁক বৃষ্টি
হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়লো এসে।
সাত তাড়াতাড়ি গোধূলি রঙবাহার
পাহাড়ি আলখাল্লায় লুকিয়ে পড়লো,
পাহাড় জবুথবু যেন জানে না কিছু।
এবার বৃষ্টি কেবল বৃষ্টি ঝমাঝম —
বঙ্গোপসাগরী অকাল বায়ুর ডানা
বৃষ্টি ঝরায় মত্ত উল্লাসে অবিরাম।
একাকী নির্জনে এক দুঃখী কণ্ঠস্বর
কান্না ঝরায় মাতাল বৃষ্টির সঙ্গমে,
চুল্লির জ্বলন্ত কার্বন কখন শেষ
ভিজে যায় ঐতিহাসিক আলমারিটা,
জবজবে স্মৃতিরা সব হারিয়ে যায়
গরান সেগুন শালের ঘন ছায়ায় —
আজ বৃষ্টি শুধু ঐকান্তিকেই কাঁদায়।
কলরব মুখর জনপদ নিঃস্তব্ধ
আজ শুধু হঠাৎ বৃষ্টির আন্দোলন,
রক্তের রক্তিম আবহে নিয়েই যায়।
বহু সাম্প্রদায়িক জন জনপদে ছিল
মিলেমিশে সুগন্ধিত মশলার মত।
বিভ্রান্ত চোখ দেখে আজ রক্তিম ধারা
এ বৃষ্টি তো বৃষ্টি নয় শোণিত বর্ষণ।
আর একা এক ঘরে একা এক লোক
দাঙ্গায় নিহত স্বজন নিয়ে একেলা
বাকি দিনগুলি গুনে গুনে হয়রান।
একদিন এই ঘর বসত ভরন্ত
গমগমে ছিল, সুখ দুঃখ হাসি কান্না
নানা কিছু গায়ে গা মিশিয়ে থেকেছিলো,
বিবাদ রহস্য প্রেম এতো সব ছিলো —
আজ আর কোন কিছু নেই শূন্য সব,
সময়ের কঠোর ডানায় চেপে আসে
আগুন বৃষ্টির স্রোতের মতন আসে
হালকা ডানায় সব কিছু উড়ে গেলো
ফেরেনি তো আর কোনদিন কোনকালে।
নিঃশব্দতায় আছে নিঃসঙ্গ প্রাণ এক
শব্দহীনতায় পরিপূর্ণ বাড়ি এক
তার মাঝখানে পুরোনো একটি প্রাণ।
শব্দহীনতাও যে মুখর হতে পারে
জানা ছিলো না তো, সেই শুধু জানে
বিশ্রস্ত বেহালার বিশ্রম্ভালাপে শোক।
আজ ঘরের ভেতরে আর এক ঘর
এই বৃষ্টির দাপটে ঠাণ্ডা হয়ে গেলো,
বৃষ্টির ঝাপটা আনে স্মৃতির দঙ্গল
রুদ্ধ দরজায় কড়া নেড়ে ক্লান্ত ওরা
প্রাঙ্গণে নেমে শুয়ে পড়ে ঝুম বর্ষণে
মৃত সৈনিকের মত সারিবদ্ধ হয়ে।
শুধু সারাকাল বৃষ্টিধারা ঝুম ঝুম
বহুকাল জমে থাকা বহু মানুষের
অশ্রু ধারার মতন ঝরে ঝরে কাঁদে।
তাই ভেতর ঘরে একা মানুষেরই
একাকী বিষণ্ণ উৎসবে শেষ কান্নায়
শেষ মোমবাতিটিও পুড়ে নিভে যায়।