নতুন কবিসুলতানা পারভীন সুমি

বহ্নি

সুলতানা পারভীন সুমি

মেয়েটি জন্মানোর কিছুক্ষণ আগে
বাড়ির পাশে বট গাছটায় ;
তিন টা কাক কা কা করে চিৎকার করছিলো!
কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করছিলো
বহুকাল আগে এ পাড়ায় কুকুরের খুব উপদ্রব ছিল
তবে আজ কোত্থেকে এলো এসব!

পাড়ার বুড়ি দাদী বললো
এ কে আসছে রে তোদের ঘরে?
এ যে আমি ভালো লক্ষন দেখিনে
কি হবে তোগের?
মেয়েটি যখন জন্মালো!
পুরো বাড়ি আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো!

পুড়ে গেলো রে সব পুড়ে গেলো
বাকেরের যা ছিল সব শ্যাষ হইয়া গেলো রে
দাদীর ক্রন্দনে দুই গাঁয়ের লোক জমায়েত হলো
আগুন নিভে গেলো!
এই সর্বনাশী,অপয়া মেয়েটিকে আজ ত্যাগ করা হোক
সাথে তার মাকে
মোড়লের এ আদেশ।
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে নিয়ে মা দৌড়ালো
পথের পর পথ মাঠের পর মাঠ, বন জঙ্গল, পেড়িয়ে
এক অচেনা নগরীতে বসতি গড়লো।

মেয়েটি যখন বড় হলো!
তখন সে নামকরা ডাক্তার
এক সম্বর্ধনা সভায় আজ তার ভাষণ

“আমি বহ্নি
মায়ের মেয়ে।
নামটি মায়েরই দেয়া
তারা ভরা কোন জ্বলজ্বল করা রাতে
আমার জন্ম হয়নি
হয়েছিল অগ্নিঝরা রাতে।
সে রাতে কেউ মিষ্টি বিলাইনি;
সে রাতে আমায় ত্যাগ করা হয়েছিল
সে রাতে আমায় বুকে চেপে ধরে মা পালিয়েছিলো।
আমি বহ্নি
সেই রাতের সেই অপয়া, সর্বনাশী মেয়েটি
আজ আমি নামকরা ডাক্তার, নামকরা মানুষ
আমার ফ্ল্যাটের পাশে একটা বট গাছ লাগিয়েছি
মাঝেমধ্যেই কথা বলি লতা পাতাদের সাথে।
তিন টা কাক পুষি
ওদের ভীষণ ভালোবাসি
ওদের ঘর আমার বট গাছে।
সকাল হলেই ওরা কা কা করে
আমায় জাগিয়ে দেয়।
কি? সব কিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে তাই না?
আমার শোবার ঘরে___
কুকুর ছানা রা ঘোরাঘুরি করে
আমায় দেখলে ওরা ঘেউ ঘেউ করে।
কাছে আসে আদরও করে।

বড় বড় অনুষ্ঠান গুলোতে আমার ডাক পরে
আমি মশাল জ্বালাই।
আমি প্রতিদিন আমার ঘরেও একটি করে প্রদীপ শিখা জ্বালাই
মা বলেছে আমি বহ্নি
আমি সদা জ্বলন্ত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *