খ্যাতিমান কবিমাইকেল মধুসূদন দত্ত

পৃথিবী

পৃথিবী – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

হে বসুধে, জগৎজননি!
দয়াময়ী তুমি, সতি, বিদিত ভুবনে!
যবে দশানন অরি,
বিসৰ্জ্জিলা হুতাশনে জানকী সুন্দরী,
তুমি গো রাখিলা বরাননে।
তুমি, ধনি, দ্বিধা হয়ে,       বৈদেহীরে কোলে লয়ে,
জুড়ালে তাহার জ্বালা বাসুকি-রমণি!

হে বসুধে, রাধা বিরহিণী!
তার প্রতি আজি তুমি বাম কি কারণে?
শ্যামের বিরহানলে,           সুভগে, অভাগা জ্বলে,
তারে যে কর না তুমি মনে?
পুড়িছে অবলা বালা,        কে সম্বরে তার জ্বালা,
হায়, এ কি রীতি তব, হে ঋতু কামিনি!

শমীর হৃদয়ে অগ্নি জ্বলে—
কিন্তু সে কি বিরহ-অনল, বসুন্ধরে?
তা হলে বন-শোভিনী
জীবন যৌবন তাপে হারাত তাপিনী—
বিরহ দুরূহ দুহে হরে!
পুড়ি আমি অভাগিনী,        চেয়ে দেখ না মেদিনি,
পুড়ে যথা বনস্থলী ঘোর দাবানলে!

আপনি তো জান গো ধরণি
তুমিও তো ভালবাস ঋতুকুলপতি!
তার শুভ আগমনে
হাসিয়া সাজহ তুমি নানা আভরণে—
কামে পেলে সাজে যথা রতি!
অলকে ঝলকে কত               ফুল-রত্ন শত শত!
তাহার বিরহ দুঃখ ভেবে দেখ, ধনি!

লোকে বলে রাধা কলঙ্কিনী!
তুমি তারে ঘৃণা কেনে কর, সীমন্তিনি?
অনন্ত, জলধি নিধি—
এই দুই বরে তোমা দিয়াছেন বিধি,
তবু তুমি মধুবিলাসিনী!
শ্যাম মম প্রাণ স্বামী—     শ্যামে হারায়েছি আমি,
আমার দুঃখে কি তুমি হও না দুঃখিনী?

হে মহি, এ অবোধ পরাণ
কেমনে করিব স্থির কহ গো আমারে?
বসন্তরাজ বিহনে
কেমনে বাঁচ গো তুমি—কি ভাবিয়া মনে—
শেখাও সে সব রাধিকারে!
মধু কহে, হে সুন্দরি,             থাক হে ধৈরয ধরি,
কালে মধু বমুধারে করে মধুদান!

(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *