জান্নাতুন নুর দিশানতুন কবি

নির্বাপিতা

~ জান্নাতুন নুর দিশা ~

এখানে সবকিছু আগের মতোই আছে।
বদলায় নি কিছুই, বদলাই নি আমি।
শেষ শীতের পুরনো কুয়াশা এখনো এখানে রাজপথ ছাড়িয়ে ঢুকে পড়ে মহল্লার গলিতে।
যেভাবে পিছু নিয়ে একবার তুমিও ঢুকে পড়েছিলে, মনে আছে?
রাতে শেষ হয়ে যাওয়া কার যেন বিয়ের বাসি মরিচবাতিগুলো ম্লান আলো ছড়াচ্ছে অদ্যাবধি সকালেও।
এলাকার ছেলেরা এখনো কী যেন যুবসংঘ করে ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছে গলির মোড়ে।
এখনো এখানে বদলায় নি কিছুই।
পুরনো কবরস্থানের পাশের বাড়িটায় কার ঘরে যেন সদ্য এক শিশুর জন্মে দেয়া হচ্ছে আজান।
বাড়ির সামনের দেয়ালটায় এখনো পাল্টাপাল্টি পোস্টার লাগিয়ে যায় রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী উঠতি পয়সাওয়ালারা।
এখনো আমি একটুও বদলাই নি।
এখনো ছাদে উঠে চুল শুকাই, মাড় দেয়া শাড়ি পরে দক্ষিণের জানালায় পড়ন্ত বিকেলে শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়ি।
এখনো হঠাৎ চমকে তাকাই তুমি ফিরেছো ভেবে প্রাত্যহিক সন্ধ্যায়।
অথচ আমি কী বেমালুম ভুলে যাই তোমার আর আসার কথা নয়!
তুমি কি এখন বুনো ঘাসফুলেদের গল্প শোনাও যেভাবে আমাকে শোনাতে?
এখনো কিচ্ছুটি বদলায় নি গো!
সামনের দোকানে গরম গরম পুরি ভাজে এখনো,
সকালবেলা খুকুমনিরা দলবেঁধে আরবি পড়তে যায় দক্ষিণের বাড়িটায়,
দুপুরে মাঝেমধ্যেই আসে ফেরিওয়ালারা,
আমি আগের মতো লাল চুড়ি কিনতে যাই ভুল করে!
কখনো কখনো এত উতলা লাগে, এত অসহ্য লাগে,
কিচ্ছু না বদলানো মহল্লায় সাঁইসাঁই করে হিম হিম বাতাস ঢোকে, সব এলোমেলো করে দিয়ে যায় গো,
আমার বুকের দরাজে তুমুলভাবে আছড়ে পড়ে নিয়তি!
আমি ছুটে যাই পুরনো, ঘোলা চোখ নিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকি শেষ বিকেলে তোমার খুব নিকটে।
এখনো সবকিছু আগের মতোই আছে।
বদলায় নি কিছু, বদলাই নি আমি।
শুধু তোমার কবরের পাশে ফুটে থাকা নাম না জানা ঘাসফুলদের জন্য আমার অনেক ঈর্ষা! অনেক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *