কৃষ্ণা দাসনতুন কবি

অযুদ নিযুদ বছর পরে

কৃষ্ণা দাস

অযুদ নিযুদ বছর পরে
কোন এক অ্যাসিড বৃষ্টি ভেজা ঘোলাটে সকাল।
হঠাৎই যেন এ জন্মের কথা মনে পড়ে গেল।
মনে পড়ে গেল তোমায় ।
শুরু হল কোযান্টাম থিওরীর বিপরীত প্রতিফলন।
তখন আমার কাচের জানলায় খেলা করে যাচ্ছে
এ জন্মের সোনা ঝরা রোদের কাল্পনিক সংলাপ।
নিঃশব্দে প্রাণহীন ধূসর পৃথিবীর ঊষর অস্তিত্বকে চ্যালেজ্ঞ জানিয়ে
একটা দুটো করে সবুজ চারা ডানা ঝাপটাতে লাগল ।
ঠিক তখন যারা জেট ফ্লাই করছিল তারা দেখে ফেলল
প্রাগৈতিহাসিক এক জোড়া সাদা বক যেন উড়ে গেল
আল্ট্রাভায়োলেট রে কে অগ্রাহ্য করে।
আমার সিলিকন ক্যাবিনের বাঁ দিকে
ঝোলান অক্সিজেন পাউচটা পিঠে ঝোলাতে গিয়ে দেখি
তাকে ছাড়াই আমি দিব্যি শ্বাস নিচ্ছি ,
আর অদ্ভূত করুন চোখে সে বস্তুটি তাকিয়ে আমার দিকে।
তোমার মুখ, তোমার অসহায় ঘোর লাগা চোখ
রাষায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে আমার মনের গবেষণাগারে।
মায়ের স্পর্শের মত স্নেহময় এক ঝলক নরম ঠান্ডা বাতাস
ভুলিয়ে দিলো যান্ত্রিক পৃথিবীর বিষাক্ততাকে ।
কংক্রীট সরিয়ে মাটির মিষ্টি গন্ধে যখন প্রাণ আনচান
তখনই তুমি টেলিপ্যাথিতে পৌঁছে গেলে আমার সময়ে।
ধীরে ধীরে খুলে নিলে রেডিও এ্যাকটিভ রক্ষাকবজ,
দুহাতের অজ্ঞলিতে তুলে নিলে আমার মুখ,
ভিজিয়ে দিলে আমার চোখের পাতা তোমার ঠোটের নির্যাসে ।
আর ঠিক তখনই আমাকে অবাক করে
প্রাইম গ্লাসে ভেসে এল সাবধান বানী-
আমি প্রাগৈতিহাসিক লুপ্ত ভাইরাস
প্রেমের কবলে পড়েছি।
বাইরে তখন পাশুঁটে ইস্পাত কঠিন আকাশ
কী করে যেন নীল হাসিতে ঝরে পড়ছে ।
দস্যু সাদা মেঘেরা শুরু করেছে হুল্লোড়,
শুকনো নদীখাতে জলস্রোতের অবুঝ পাগলামি।
আমি সকৌতুকে দেখলাম
বৃদ্ধ প্রাণহীন এলব্রুজের গা বেয়ে
নাচতে নাচতে নেমে এল অসংখ্য সুন্দরী ঝরনা ,
যাদের হাস্য লাস্যে সে তখন নব্য তরুন সবুজ যুবক।
ইতিহাসের পাতা থেকে উড়ে এল হীরামন, কোকিল,
শুরু হল প্রাণান্ত আহ্বান।
আর ফুলের সৌরভের বন্যায়
তোমার দুহাতে ভেসে যেতে যেতে
আমার ঠোট নড়ে উঠল -‘ভালোবাসি’।
সেই প্রথম; সেই প্রথমই প্রমাণ পেলাম
আমি মানবী ,
আর আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বর্তমান।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *