অগ্নিদগ্ধ তিলোত্তমার অলিখিত পত্র
অগ্নিদগ্ধ তিলোত্তমার অলিখিত পত্র – সুলতানা পারভীন সুমি
দর্পন,
তোমাকে এই মুহুর্তে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছি না। তবে একসময় দর্পনের সামনে দাঁড়ালে আমি নিজেকে দেখতে পেতাম। মনে হতো দর্পনের ভিতরে আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। কি সুন্দর চোখ জোড়া! যেন মায়ায় বেঁধেছে আমায়। চাইলেও এই মায়া কে উপেক্ষা করবার সাধ্য আমার নেই।
হটাৎ সেই মায়া ভরা চোখে আমি আগুন দেখছিলাম। তুমি দিয়াশলাই হাতে নিয়ে এগোচ্ছিলে আর আমি তোমায় মন ভরে দেখছিলাম!আমি দেখছিলাম আমার দর্পন আগে এভাবেই এগিয়ে আসতো আমায় জড়িয়ে ধরতে __
সেদিন সন্ধ্যায় দিয়াশলাই হাতে আমি বোকার মত তোমায় দেখছিলাম। আমার দর্পন আর আগের মত নেই। আজ অন্য কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
কি বোকা আমি! আর একটু চালাক হলে কি পালিয়ে
যেতাম সেদিন বলোতো। নিজেকে রক্ষা করতাম!আমি তো বোকাই ছিলাম সারাজীবন।
তুমি আমায় পুড়িয়ে ফেলেছো দর্পন!আগুনের লেলিহান শিখা আমার গোটা শরীর পুড়িয়ে ফেলেছে।সেই সাথে হৃদয়ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছো। যেখান টাই তুমি থাকতে! তুমি আমাকে নয় দর্পন তুমি জ্বালিয়েছো তোমায়। শরীর টা আমার হলেও ওই খানটায় যে তোমায় রেখেছিলাম।ফুসফুস টা ও পুড়ে গেছে কি করে নিঃশ্বাস নেই বলো তো!বুকটাও জ্বলে যাচ্ছে,
একদিন সামান্য ঠান্ডা লেগেছিল বলে বাসার সামনে কত পাগলামি করেছিলে!
আজ হাসপাতালের বেডে অক্সিজেনেও কাজ হচ্ছে না,
আমি শান্তি পাচ্ছি না দর্পন।
সাত পাঁচ ভেবে যাচ্ছি বার বার সেই কালো সন্ধ্যার স্মৃতি চারণ তোমার প্রতি ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে,
কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি দর্পন।
কেন স্মৃতি মুছে যায় না? কেন খারাপ সময় গুলো বার বার মনে পড়ে যায়!সেবার আমাদের বিয়ের প্রথম সপ্তাহে আমি হাতে সামান্য আগুনের ছ্যাঁকা খেয়েছিলাম। তুমি বাচ্চাদের মত যেসব কান্ড করেছিলে! উফফ, দেখেছো কি একটা অক্সিজেন দিয়েছে আমার যে কি কষ্ট হচ্ছে আমার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তুমি তো এলে না দর্পন সেই পাগলামি তো আর করলে না!
উল্টো আমায় জ্বালিয়ে দিলে এভাবে।দর্পন তুমি বদলে গিয়েছিলে অনেক আগেই আমি মানিয়ে চলেছি।
সন্দীপন আমায় ভালোবাসতো আমি নই, যাত্রা পথে আমাদের দেখা হয়েছিল সন্দীপন বলেছিলো, কেমন আছো তিলোত্তমা?
আমি বলেছিলাম ভালোই। কই আগ বাড়িয়ে আমি তো বলিনি কিছু। কি দেখলে তুমি? কি শুনলে কার কাছে? তাই বলে পুড়িয়ে দিলে! দর্পন তুমি শুধু আমায় পুড়িয়ে ফেলোনি পুড়িয়ে ফেলেছো এক বাবার রাজ কন্যাকে
যে বাবা তার কন্যার সামান্য হোঁচটে সারারাত কেঁদে ভাসাতো। তুমি পুড়িয়েছো এক মাকে দর্পন যে মা তার কন্যা না খেলে সে খেতো না। কন্যার জ্বর হলে তার নিজেরই জ্বর এসে যেতো। ইশ! তোমায় চিনতে ভুল হয়ে গেলো আমার।
দর্পন একবার হাসপাতালে যদি আসতে যদি দেখতে তোমার তিলোত্তমা কতখানি কাতরাচ্ছে!
কি করে এত নিষ্টুর হলে? কি করে দর্পন?
ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণা করে মরে যেতে চাই না।
মৃত্যুর পরেও ভালোবেসে যেতে চাই। দিন যত যাচ্ছে মৃত্যু যেন ততই ডাকছে।হাসপাতালে যদি একবার আসতে! আমি তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ রাখিনি। বাবা মা কেও বলেছি কোন অভিযোগ না রাখতে। শেষের দিন গুলোতে তোমার বিরক্তি এসেছিলে বললেই হতো চলে যেতাম।
এভাবে কেউ জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়
তোমার তিলোত্তমার যে কষ্ট হচ্ছে দর্পন।
ইতি
অগ্নিদগ্ধ তিলোত্তমা ( নামটা সুন্দর তাই না দর্পন!)