শান্তি ও একটি চাম্বুল গাছ
– সৌরভ আহমেদ
এই জায়গায়, এই জায়গায় চলাফেরা করত শান্তি আক্তার, এই জায়গায়
এখানকার নিসর্গ শান্তিতে পরিপুষ্ট, রাস্তার পাশের ওই যে বিশাল চাম্বুল গাছটি,
ও কখনোই শ্বাস নিত না, যখনই শান্তিকে দেখত তখনই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে
শুরু করত, শান্তির কার্বনডাই অক্রাইডে অনেক খানি বড় হয়ে যেত এক দিনেই,
শান্তি ছিল ওর কাছে ভেষজ বৃক্ষ, এখানকার সবগুলো গাছ, পত্রপল্লব, পুষ্প ও তার ঘ্রাণ,
মাহিলারা কলেজ, আলো, বাতাস, মাটি, তার সোঁদা গন্ধ সবকিছু শান্তির আত্মীয়, ওরা
সবাই শান্তিকে দেখেছে, শান্তির চলার ছন্দ বলে দিত পারত এখানকার পিঁপড়াও,
চব্বিশ মাস ওরা শান্তিকে কাছে থেকে দেখেছে,
এক একটা ঋতু এখানে এসে ষাট দিন পর পৃষ্ঠ প্রদর্শন
করে চলে গেছে, এখানকার প্রকৃতি বর্ষা ঋতুর প্রেমে পড়েছিল, বাউল হয়ে গিয়েছিল বসন্তের
নাতিশীতোষ্ণ ভালবাসায়, রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড বনে গিয়েছিল হেমন্তের আগমনে, কিন্তু কেউ
শেষ পর্যন্ত থাকেনি, ষাট দিন শেষে পরদেশির মত ঋতুগুলো তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে গেছে
একবারও তারা পেছন ফিরে তাকায়নি, বিদায় মুহূর্তে তারা প্রকৃতির মনের দিকে চোখ
মেলেও চায়নি, চব্বিশটি মাস এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের দর্শক ছিল শান্তি আক্তার, হেমন্তের
আঘাতে হাসপাতাসে ভর্তি হয়েছিল প্রকৃতি, পাশ ফিরে শুতে পারত না রাতে, প্রকৃতির সেই
দুর্দিনে শান্তিই ছিল একমাত্র ভরসা, রাত জেগে শান্তি প্রকৃতির সেবা শশ্রুষা করত, ডাক্তারের
অনুমতি নিয়ে প্রকৃতির চুলে বিলি কাটত সিঁথানে বসে গভীর রাতে, এক কথায় প্রকৃতিকে
পুনর্জন্ম দিয়েছিল শান্তি আক্তার, ভগ্নহৃদয় প্রকৃতি এরপর শান্তির প্রেম পড়ে যায়
না, এখানেই শেষ নয়
চব্বিশ মাস পর শান্তি অক্তারও সার্টিফিকেট নিয়ে ছেড়ে যায় মাহিলারা কলেজ
একটু আগে চাম্বুল গাছটি আমাকে দেখে বলে উঠেছিল শান্তিকে দেখেছেন, শান্তি অক্তারকে?
রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসেনি শান্তি? আমি কি করে উত্তর দেব! এই প্রশ্নের উত্তর
আমার জানা নেই, শান্তিকে মনে রাখতে চাই না আর, শান্তি একটা স্ফুলিঙ্গের নাম!
শান্তি একটা ভূমিকম্পের নাম! শান্তি একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম! ছাই চাপা বিষাদসিন্ধুর নাম
ওহে মাহিলারা ডিগ্রি কলেজের রাস্তার পাশের বিশাল চাম্বুল গাছ, আমি জানি না
শান্তি কোথায় আছে!