কৃষ্ণা দাসনতুন কবি

ঝড়

কৃষ্ণা দাস

জানেন আমার গন্ধরাজে কুঁড়ি এসেছে,
সকাল বেলায় বাগানে গিয়ে দেখি
শিশিরে আদরে মাখামাখি।
জানেন বেলগুলোও পাগলের মত
সুগন্ধ ছড়াচ্ছে আজকাল।
সেই যে সেদিন ঝড় উঠলো-
আপনি তখন আমার বাগানে,
দেখেছিলেন কত জুঁই ফুটে ছিল থরে থরে?
আপনি তখন মৌন মুখর
যেন কোন গভীর থেকে
সংগোপনে তুলে আনছেন অস্তিত্বের সুবাস ।
আমার বাগান ভরা ফুল সকৌতুক;
তাকিয়ে ছিল আপনার দিকে,
আপনার ডুবুরি চোখ
খুঁজে চলেছে গুপ্তধন,
আবিষ্কারের নেশায়
তন্ন তন্ন করে
আমার চোখের গভীরে।
হাওয়ায় উড়ছিল কিছু অবাধ্য শুকনো পাতা,
কিছু অসহায় পাখির পালক,
আর কিছু বেপরোয়া দামাল সম্ভাবনা।
আপনি ভায়োলিনে তুললেন ঝড়।
অন্তলীন সুরের আবহে
এক মাথা এলোমেলো উড়ন্ত চুল
আছড়ে পড়ছিল আপনার কপালে, চোখে. মুখে।
ঝড়ের দাপটে ওলোট-পালোট জানলা খসা মন ,
তবুও আপনি স্থির অবিচল ,
ভূমধ্য সাগর তীরে
যেন কোন গ্রীক ভাস্কর্য।
তখন ষড়যন্ত্র করেছিল বাতাস ;
উড়িয়েছিল আমার আঁচল;
কারণে অকারণে ছুঁয়ে যাচ্ছিল
আপনার বিদগ্ধ মুখ;
আপনার কুঁঞ্চিত ভ্রূ;
আপনার বন্ধ সমাহিত চোখের পাতা।
আপনার সুরের ঠোটের অদৃশ্য স্পর্শে
একা একা ভিজছিল আমার চোখের পাতা,
আমার অস্তিত্ব, আমার সযত্নে লালিত অহংকার।
কী করে যেন জানাজানি হয়ে গেল তা
বাতাসের কাছে ।
তার পর-
ঝড় থামল, ভায়োলিন থামল,
থামল প্রহর যাপন।
শুকনো পাতার আস্তরণ সরিয়ে
জেগে উঠল সতেজ পাতা,
আর মেঘের ঘোমটা সরিয়ে
জানিনা কেন
অলক্ষ্যে হেসে উঠল চাঁদ।
জেগে উঠলো ক্লান্ত আধবোজা
রক্তাক্ত মাদকতা ভরা দুটি চোখ ,
যেন সুবিশাল আটল্যান্টিক মহাসাগর সাঁতরে
উঠে এলেন
ভিজে ঢোল মনে
আকন্ঠ পিপাসায়
আমার শ্যাওলা সবুজ
হিয়ার পাড়ে ।
কিন্তু ঝড় যে আর থামলনা ,
আপনার মনে, আপনার চোখের তারায়।
নঙ্গর হারা অস্তিত্ব শুধু কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকল
সে কোন বিদ্ধংশী প্রলয় সম্ভাবনায় প্রবল উচ্ছ্বাসে।
জানেন সেই রাতেই প্রথম ফুটেছিল গোলাপ
আমার বাগান আলো করে;
রক্তলাল- নিটোল -সুগন্ঘময়।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *